আমিন মুনশি | ১৯ জুলাই ২০২০ | ৮:১৯ অপরাহ্ণ
ছবি: সংগৃহীত
‘শ্যামল ছায়া’ সিনেমাটি দেখার পর থেকেই আমার চিন্তায় ঘুরপাক খাচ্ছিল- কে এই সিনেমার স্রষ্টা? কিভাবে তিনি পারলেন স্রোতের বিপরীতে নিজেকে দাঁড় করাতে! বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তো অনেকেই অনেক ছবি বানিয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধা আর রাজাকারের চরিত্র ঠিক করতে গিয়ে সবাই যখন একজন হুজুরকে বা দাড়ি-টুপিওয়ালাকে খলনায়ক হিসেবে উপস্থাপন করছেন তখন কোন সাহসে অথবা কোন দৃঢ় তথ্যের ভিত্তিতে এই পরিচালক একজন জুব্বা পরিহিত আলেমকে নায়কের ভূমিকায় উপস্থাপন করলেন!
স্রোতের বিপরীতে চলতে তো সাহস লাগে। অদম্য সাহস। আর সেই সাহসী মানুষটিকে আমি আবিষ্কার করলাম অল্প কিছুদিনের ব্যবধানে। তবে অন্য পরিচয়ে। তিনি একজন লেখক। তুমুল জনপ্রিয় লেখক। যাকে সম্বোধন করা হয় ‘বাংলা সাহিত্যের বরপুত্র’ বলে; আমি তার ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠলাম।
এ কী! বাজারে তার এতো বই!! এতো জনপ্রিয়তা!!! আমি অবাক হই। কীভাবে এতো বই লিখতে পারে একজন মানুষ। তিনি খাবার খান কখন, ঘুমান কখন? আমি আরও আগ্রহবোধ করি, যখন খেয়াল করি তার রচনাশৈলী আমাকে টানছে। তার লেখার ভেতর খুব সহজেই হারিয়ে যাচ্ছি আমি। কল্পনায় তার গল্পের চরিত্রগুলো আমার আশেপাশে ঘুরছে।
আমি পড়তে থাকি, পড়তে থাকি। আর নিজেকে কখনো হিমু, কখনো মিসির আলী কখনো শুভ্র ভাবতে থাকি। যদিও শুভ্র হিসেবে নিজেকে খুব বেশিদিন ভাবার সুযোগ আমাদেরকে দেননি জাদুকর এই লেখক। আমার হঠাৎ করেই মনে হলো, আমি দিনদিন পাঠের ভেতর ডুবে যাচ্ছি। লেখকের প্রতিটি বই পড়ার তীব্র নেশায় আচ্ছন্ন হয়ে যাচ্ছি। অথচ বই পড়ার প্রতি কখনই আমার মনোযোগ ছিলো না! বইপড়া যে মানুষের অভ্যাসে পরিণত হতে পারে এবং এতোটা আনন্দদায়ক হতে পারে তা আমার জানা ছিলোনা। এই লেখকের কল্যাণে আমি এক প্রাণবন্ত জীবনের সন্ধান পেলাম। জ্ঞানার্জনের জন্য অধ্যবসায়ের অনুপ্রেরণা পেলাম; জীবনবোধের দীক্ষা পেলাম।
বাঙালি মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির জীবন সংগ্রাম এবং চিরায়ত বাংলার প্রকৃতি, বৃক্ষ, জোছনা, বৃষ্টির কথা পড়তে পড়তে আমিও এসবের প্রেমে পড়ে গেছি। আর তার লেখা ‘প্রেমের গল্প’ বইটিই ছিল আমার প্রথম হুমায়ূন আহমেদ পাঠ। এরপর ‘ছায়াবীথি’ ‘শুভ্র গেছে বনে’ ‘এই বসন্তে’ ‘কিছুক্ষণ’ ‘সাজঘর’ ‘ম্যাজিক মুনশি’ ‘হিমু সমগ্র’ ‘জোছনা ও জননীর গল্প’ ‘যখন নামিবে আঁধার’ ‘দেয়াল’ ‘মাতাল হাওয়া’ ‘নবনী’সহ কতগুলো বই যে পড়েছি- তার সঠিক সংখ্যা বলতে পারবো না। তবে সংখ্যাটি শতকের কোটা পেরিয়েছে- এটা নিশ্চিত।
আমাদের অনেকে তার রচনাকে হেয় করে দেখে- দেখুক। কেউ কেউ তার ধর্মবিশ্বাস নিয়ে কটূক্তি করে- করুক। ভক্ত-পাঠকের কাছে জীবিত হুমায়ূনের চেয়ে মরহুম হুমায়ূনের কদর কম নয়। এখনো পাঠক বইমেলায় গিয়ে তাকে খোঁজ করে। তার প্রতিকৃতিতে অশ্রু ঝরায় বিয়োগব্যথায়। নাট্যপ্রেমীরা স্মৃতিচারণ করে তার নির্মিত নাটকের। সিনেমাপ্রেমীরা তার সৃষ্টিশীল সিনেমার অপেক্ষায় হা-পিত্যেস করে।
একজন বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষ হয়েও তিনি কিন্তু ভুলে যাননি তার শেকড়কে। নিজের আত্মায় প্রোত্থিত বিশ্বাসকে। এ জন্যই তার পর্যবেক্ষণ ছিলো নিরপেক্ষ। তিনি কোন দলমতের কাছে নিজেকে খাটো করেননি অন্য অনেকের মতো। কারণ, তিনি ছিলেন সাহসী। আর সাহসী মানুষেরা কখনোই সত্য উচ্চারণে পিছপা হন না।
কওমীনিউজ/মুনশি
বাংলাদেশ সময়: ৮:১৯ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১৯ জুলাই ২০২০
qaominews.com | a k m ashraf