আমিন মুনশি | ০৭ আগস্ট ২০২০ | ৬:২৬ অপরাহ্ণ
ছবি: প্রতীকী
কোনো সোর্স থেকে সংবাদ গ্রহণ করার আগে অবশ্যই যাচাই-বাছাই করে নিতে হবে। সত্যটা জেনে নিতে হবে। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! যদি কোনো পাপাচারী ব্যক্তি তোমাদের কাছে কোনো সংবাদ নিয়ে আসে, তাহলে তোমরা তা যাচাই করে দেখবে। অন্যথায় খুব সম্ভব তোমরা অজ্ঞতাবশত কোনো সম্প্রদায়কে ক্ষতিগ্রস্ত করে বসবে, ফলে তোমাদের কৃতকর্মের জন্য তোমাদের অনুতপ্ত হতে হবে।’ (সুরা হুজরাত :৬)
আয়াতটি নাজিলের প্রেক্ষাপট এ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার প্রেক্ষাপট বর্ণিত হয়েছে হাদিসে। বনু মুস্তালিক গোত্রের প্রধান হজরত হারিস (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর খেদমতে উপস্থিত হলে তিনি আমাকে ইসলামের দাওয়াত দিলেন এবং জাকাত প্রদানের আদেশ দিলেন। আমি ইসলামের দাওয়াত কবুল করে নবিজিকে বললাম, আমি গোত্রে ফিরে গিয়ে সবাইকে ইসলাম গ্রহণ ও জাকাত প্রদানের দাওয়াত দেব। আপনি দূত পাঠিয়ে সেসব নিয়ে আসবেন।’ এরপর হারিস (রা.) ওয়াদা অনুযায়ী জাকাতের অর্থ জমা করলেন। তবে দূত আগমনের নির্ধারিত মাস ও তারিখ পার হওয়ার পরও কোনো দূত আগমন করল না। তখন তিনি আশঙ্কা করলেন, সম্ভবত রাসুলুল্লাহ (সা.) কোনো কারণে অসন্তুষ্ট হয়েছেন।
এদিকে রাসুলুল্লাহ (সা.) নির্ধারিত তারিখে ওয়ালিদ ইবনে ওকবাকে (রা.) জাকাত গ্রহণের জন্য পাঠিয়ে দেন। কিন্তু পথিমধ্যে ওয়ালিদ (রা.)-এর মনে ধারণা জাগ্রত হলো যে, বনু মুস্তালিক গোত্রের সঙ্গে যেহেতু তাদের গোত্রের পুরনো শত্রুতা রয়েছে; তাই এখন যদি তারা তাকে পেয়ে হত্যা করে ফেলে! এই ভয়ের কথা চিন্তা করে তিনি সেখান থেকেই ফিরে আসেন এবং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে ফিরে গিয়ে বলেন যে, ‘তারা জাকাত দিতে অস্বীকার করেছে এবং আমাকে হত্যা করারও ইচ্ছা করেছে।’ তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) রাগান্বিত হয়ে খালেদ ইবনে ওয়ালিদ (রা.)-এর নেতৃত্বে হারিসকে (রা.) শায়েস্তা করতে একটি বাহিনী প্রেরণ করলেন।
খালিদ বিন ওয়ালিদ (রা.) বাহিনী নিয়ে বনু মুস্তালিক গোত্রে পৌঁছলে গোত্রপ্রধান হজরত হারেস (রা.) জিজ্ঞাসা করলেন, আপনারা কোন গোত্রের প্রতি প্রেরিত হয়েছেন? উত্তর হলো, ‘আমরা তোমাদের প্রতিই প্রেরিত হয়েছি’। হারিস (রা.) কারণ জিজ্ঞাস করলে ওয়ালিদ ইবনে ওকবাকে (রা.) প্রেরণ ও তার প্রত্যাবর্তনের কাহিনি শোনানো হলো এবং ওলিদের এই বিবৃতিও শোনানো হলো যে, ‘বনু মুস্তালিক গোত্র জাকাত দিতে অস্বীকার করে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেছে।’ এ কথা শুনে হারিস (রা.) বললেন, ‘ওই আল্লাহর কসম, যিনি মুহাম্মদকে (সা.) রাসুল করে প্রেরণ করেছেন, আমি ওয়ালিদ ইবনে ওকবাকে দেখিওনি! সে তো আমার কাছে আসেইনি!’
অতঃপর হারিস (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সামনে উপস্থিত হলে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তুমি কি জাকাত দিতে অস্বীকার করেছ এবং আমার দূতকে হত্যা করতে চেয়েছ?’ হারিস (রা.) বললেন, ‘কখনই নয়; ওই আল্লাহর কসম! যিনি আপনাকে সত্য পয়গামসহ প্রেরণ করেছেন, সে আমার কাছে যায়নি এবং আমি তাকে দেখিওনি। নির্ধারিত সময়ে আপনার দূত যায়নি দেখে আমার আশঙ্কা হয় যে, আপনি কোনো ত্রুটির কারণে আমাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়েছেন!’
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সুরা হুজুরাতের আলোচ্য আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। (মুসনাদে আহমাদ : ৪/২৭৯-৩/৪৮৮)
কওমীনিউজ/মুনশি
বাংলাদেশ সময়: ৬:২৬ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ০৭ আগস্ট ২০২০
qaominews.com | a k m ashraf