মাওলানা জাকির হুসাইন | ১০ জুলাই ২০২০ | ১০:৩৫ পূর্বাহ্ণ
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশে একটি মাদরাসা আছে, যেখানে ভর্তি হতে লাগে ৭ টাকা। ৫ টাকা ভর্তি ফরম এবং ২ টাকা কিতাব ফরম। এক বছরের খরচ সর্বমোট ৭ টাকা, এটাও কি সম্ভব? সিলেট দরগাহ মাদরাসা। এই মাদরাসায় সারা বছর খাওয়ার জন্য এক টাকাও দিতে হয়না। অথচ সিলেটের অন্যান্য সব মাদরাসা থেকে উন্নত খাবার। এই মাদরাসায় পরীক্ষার সময় ১ টাকাও ফি নেয়া হয়না। এই মাদরাসায় প্রতি মাসে ছাত্রদের ১০০ টাকা করে হাতখরচ দেয়া হয়। অথচ এই মাদরাসা সিলেটের মধ্যে সবচেয়ে ধনী মাদরাসা নয়, এত্থেকেও ধনী মাদরাসা আছে।
এই মাদরাসা প্রায় প্রতিবছর সিলেটের মাঝে সেরা রেজাল্ট করে। এই বছর আল হাইয়াতুল উলইয়ার সিলেট বিভাগের সেরা রেজাল্ট এই মাদরাসায়। বলতে গেলে সিলেট বিভাগের সম্মান বেঁচেছে এই মাদরাসার কারণে।
অনেকেই বলে থাকেন ছাত্র বাছাই করে রাখা হয় তাই ভালো রেজাল্ট হয়। বাছাই করে ছাত্র রাখা হয়না কোন মাদ্রাসায়? সব মাদ্রাসাতেই ভর্তি পরিক্ষা নেয়া হয়। ভর্তি পরিক্ষায় পাশ করলে রাখা হয়। ফেল করলে বাদ। মাদরাসার ছাত্রাবাসে এক ক্লাসে সিট ৩০ টা থাকলে ৪০ জন রাখা যাবে কি করে? আর সেই ৩০ জন অবশ্যই যারা পাশ করবে তাদেরকেই রাখা হবে, তাই না? দরগাহ মাদরাসায় ছাত্ররা আসে পড়ার জন্য এবং মেহনতি ছাত্র ভর্তি হয়। তাই কোন গার্ড দেয়ার প্রয়োজন হয়না, ছাত্ররা নিজে থেকেই পড়ে।
দরগাহ কেন ভালো ছাত্র ভর্তি হয়? কারণ তাদের খাবার উন্নত, নিয়মশৃংখলা উন্নত, পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ইত্যাদি। এই মাদরাসা সিলেটের মাঝে নিয়ম শৃংখলার দিক থেকে সেরা। কর্মচারী স্টাফদের মাঝে কাজ বন্টন করা। প্রত্যেকের আলাদা আলাদা কাজ। কখনই মাদরাসার বাথরুম সিড়ি রান্নাঘর অপরিচ্ছন্ন পরিলক্ষিত হয়না। এই মাদরাসার গুণাগুণ বর্ণনা করে শেষ করা আমার মত অধমের পক্ষে মোটেও সম্ভব নয়। মাত্র ১১বছর পড়েছি এই মাদরাসায়। এর আগে আরো ২ মাদরাসায় পড়েছি। আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ মাদরাসা এটি।
এত কিছু শুনার পর আপনারা বলতে পারেন মাদরাসার টাকা পয়সা অনেক বেশি তাই এরকম। বাস্তবে এই মাদরাসায় আয়ের তুলনায় ব্যায় অনেক বেশি। যতটা আয় হয় ততটাই ব্যায় হয়ে যায়। ব্যায়ের খাত দেখতেই পাচ্ছেন। অনেক সময় মাদরাসা অভাবে পতিত হয়। আল্লাহ পাক উদ্ধার করেন। মাদরাসা ধনী ঠিক, তবে সব চেয়ে ধনী নয়। সিলেটে এর চেয়েও ধনী মাদরাসা রয়েছে।
নিজের চোখে দেখা কত মাদরাসা। মার্কেটের ভাড়া দিয়েই সারা মাস চলে যাওয়ার সামর্থ্য রয়েছে। তাছাড়াও লন্ডন আমেরিকা চাঁদা কালেকশন। বিভিন্ন ট্রাষ্টের মাধ্যমে চাঁদা কালেকশন। মৌসুমে ওয়াজে চাঁদা কালেকশন করা হয়। এসব মাদরাসায় ছাত্রদের খাবারের অবস্থা দেখলে আফসোস হয়। তরকারিতে এত লম্বা ঝুল থাকে, আশা করা যায় ঝুল দিয়ে অযু সারা যাবে। ছাত্রদের খাবার নিয়ে কোন চিন্তা নেই। পঁচা খাবারের দুঃখে ভালো ছাত্র মাদ্রাসায় ভর্তি হয়না। ভর্তি হলেও জঘন্য খাবার সহ্য করতে না পেরে লজিংয়ের আশ্রয় নিতে হয়। লজিংয়ে থাকার কারণে ভালো ছাত্ররাও খারাপ হয়ে যায়। মানুষের কাছে চাঁদা কালেকশন করা হয় মাদরাসার বিল্ডিং বানানোর জন্য। অথচ যেসব বিল্ডিং আছে ছাত্র অনুযায়ী সেগুলোই যথেষ্ট। ছাত্ররা জঘন্য খাবারের দুঃখে মাদরাসায় থাকতে পারেনা।
পাঁচতলা বিল্ডিং দিয়ে কি হবে? মাদরাসার পড়ালেখা উন্নত করতে হলে আগে ছাত্রদের খাবার উন্নত করা হোক। দেখবেন ভালো ছাত্র এমনিতেই ভর্তি হবে। মাদ্রাসার ছাত্র ভালো না হলে, পড়ালেখা ঠিক মত না করলে কঠোর আইন করে কোন ফায়দা নাই।
ভালো ছাত্র ও ভালো রেজাল্টের আশা করলে আগে ভালো খাবারের ব্যবস্থা করা জরুরী। সাথে সাথে মাদরাসার নিয়ম শৃংখলা সুন্দর করতে হবে। মাদরাসার পরিবেশ উন্নত করতে হবে। পরিস্কার পরিচ্ছনার প্রতি যত্নবান হতে হবে। সকল মাদরাসা কর্তৃপক্ষের শুভবুদ্ধির উদয় হোক।
দরগাহ তোমার কোলে এসে হলাম আমি ধন্য।
চিরদিন শুভকামনা করবো আমি তোমার জন্য।
কওমীনিউজ/মুনশি
বাংলাদেশ সময়: ১০:৩৫ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ১০ জুলাই ২০২০
qaominews.com | a k m ashraf