নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৫ জুলাই ২০২০ | ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
সরকারের উচ্চ মহলের সাথে বৈঠক করে বের হয়ে আসছেন মাওলানা নূর হুসাইন কাসেমী, সাথে মাওলানা মুসলেহ উদ্দিন রাজু।
কওমী মাদরাসার বৃহত্তম শিক্ষাবোর্ড- বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ বা বেফাককে দখলে নিতে দীর্ঘদিন যাবত একটি কুচক্রিমহল নানা অপচেষ্টা চালিয়ে আসছে। একটি সিন্ডিকেট ও বলয় সৃষ্টি করে বেফাকের ভেতর ও বাহিরে পরিকল্পিতভাবে অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা তৈরির পাঁয়তারা করছে। বেফাকের সাবেক মহাসচিব মাওলানা আব্দুল জব্বার রহ.-এর বিরুদ্ধেও একসময় ওই চিহ্নিত গ্রুপটি তখনকার সহকারি মহাপরিচালককে দিয়ে পেরেশান করে রেখেছিল। বিভিন্ন অভিযোগ ও অভ্যুত্থানের চেষ্টা করেছিল। অথচ তখনও তারা বেফাকের ভেতর সকল অনিয়ম ও দুর্নীতির হোতা ছিল। যার সাক্ষ্য হিসেবে তখনকার বেফাক সংশ্লিষ্টরা সবাই আছেন।
ওই কুচক্রি মহল মাওলানা নূর হুসাইন কাসেমীর নেতৃত্বে আবারও মাথাচাড়া দিয়ে ওঠেছে। বেফাকের বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত তাদের আর তর সইছে না। এজন্য তারা বর্তমান মহাপরিচালক মাওলানা যুবাইর আহমদ চৌধুরীকে দিয়ে বর্তমান কমিটির বিরুদ্ধে ভেতর ও বাহিরে এবং নামে বেনামে ফেসবুক আইডি খুলে অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে। মাওলানা নূর হুসাইন কাসেমী তার নিজস্ব বলয় ও গ্রুপকে শক্তিশালী করে তার মিশনকে বাস্তবায়ন করার জন্য ঢাকা অঞ্চলে যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক এবং সিলেট ও ময়মনসিংহ অঞ্চলে সহ-সভাপতি মাওলানা মুসলেহ উদ্দিন রাজুকে ব্যবহার করছেন বলেও জানা গেছে।
একটি বিশ্বস্ত সূত্র কওমীনিউজকে জানায়, মাওলানা নূর হুসাইন কাসেমীদের এই অপচেষ্টা শুধুমাত্র বেফাক ও কওমী অঙ্গনে সীমাবদ্ধ নয়, তারা এখন ক্ষমতাসীন সরকারের বিভিন্ন পর্যায়েও ধন্না দিচ্ছেন। সরকারের বিভিন্ন উচ্চমহলে যোগাযোগ করছেন।
আরো পড়ুনঃ মধ্যরাতে গোপন বৈঠক, বেফাক দখলের ষড়যন্ত্র
নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক একটি সূত্র কওমীনিউজকে আরও জানায়, হেফাজতে ইসলামের আন্দোলনের পূর্ব থেকে মাওলানা নূর হুসাইন কাসেমী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একজন গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টার সঙ্গে সর্বক্ষণ যোগাযোগ রক্ষা করে আসছেন। যার দরুন হেফাজতের অনেক ছোটোখাটো নেতাদের বিরুদ্ধেও ৪০-৫০টা মামলা হয়, বাড়ি-ঘরে তারা থাকতে পারেননি। তাদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট হয়, পুলিশ হয়রানি করে তাদেরকে। কোনো রাজনৈতিক দল কোথাও প্রোগ্রাম করতে পারেনি, ইফতার মাহফিল করতে পারেনি। কিন্তু মাওলানা নূর হুসাইন কাসেমীর কোন সমস্যা হয় না। তিনি দিব্যি মাদরাসা ও বাসায় অবস্থান করেন।
মাদরাসার মসজিদে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে প্রধান অতিথি করে ইফতার মাহফিল আয়োজন করেন, সরকার তাকে কোন বাধা দেয়নি। ৬ মে ২০১৩ সনে হেফাজত ট্রাজেটির পর ছোট-বড় অনেক হেফাজতনেতার বিরুদ্ধে সরকার অ্যাকশনে যায়, কিন্তু সেদিনকার ঐতিহাসিক ওই মহা-সম্মেলনের সভাপতি ঢাকা মহানগর হেফাজতের সভাপতি মাওলানা নূর হুসাইন কাসেমীর বিরুদ্ধে সরকার কোন অ্যাকশনে যায়নি। তাকে বিভিন্ন সময় র্যাব ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা উঠিয়ে নিয়ে গেছে এবং আবার জামাই আদর করে ফেরৎ দিয়ে গেছে। বিভিন্ন সময় হেফাজতের প্রোগ্রাম ঘোষণা করেছেন আবার প্রত্যাহারও করেছেন। এসব বিষয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সাবেক সামরিক সচিব মেজর জেনারেল জয়নাল আবেদীনের সাথে সর্বক্ষণ যোগাযোগ রাখতেন।
আরো পড়ুনঃ নূর হোসাইন কাসেমী নিজেই তো বেফাক থেকে বহিস্কৃত: মাওলানা আবদুল গনি
শাপলা ট্রাজেডির পরের দিন লালবাগ থেকে মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরীকে, ২রা সেপ্টেম্বর ২০১৩ চৌধুরীপাড়া মাদরাসায় বেফাকের সভা থেকে মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাসকে পুলিশ গ্রেফতার করে। ওই সভায় শাপলার ওই সম্মেলনের সভাপতিও উপস্থিত ছিলেন তাকে গ্রেফতার না করে ওই ঘটনার অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি মুফতি ওয়াক্কাসকে কেন গ্রেফতার করল? গোটা ইসলামপন্থীদের মাঝে এ এক বড় প্রশ্ন! সরকারের সাথে আঁতাত করে মুফতি ওয়াক্কাসকে নূর হুসাইন কাসেমীই ধরিয়ে দিয়েছিলেন বলে সূত্রটি দাবি করে।
এখনও তিনি দেশের সর্বোচ্চ গোয়েন্দা সংস্থা, প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টা ও একজন পুলিশ কমিশনারের সাথে সর্বক্ষণ যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন। তাদেরকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছেন বলেও সূত্রটি কওমীনিউজকে জানায়। সরকারের ও আন্তর্জাতিক ইসলামবিরোধীদের সাথে আঁতাত করে যেমন বারিধারায় কূটনৈতিক এরিয়ায় ভারতের হাইকমিশন ও আমেরিকান এ্যাম্বেসির মাত্র ২০০-২৫০ গজ দূরে সরকারি জমি অবৈধভাবে দখল করে বিশাল মাদরাসা পরিচালনা করছেন, ঠিক এভাবেই তিনি এখন বেফাক ও হেফাজত দখলে নিতে সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন বলে কওমীনিউজকে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
কওমীনিউজ/এইচ
বাংলাদেশ সময়: ১২:০০ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ২৫ জুলাই ২০২০
qaominews.com | a k m ashraf