ফিচার ডেস্ক | ২১ জুলাই ২০২০ | ৯:৪৬ অপরাহ্ণ
ফাইল ফটো
Don’t trust, verify! -‘বিশ্বাস নয়, যাচাই করুন।’ যেকোনো অডিট বা নিরীক্ষার মূল মন্ত্র এটি। মূলত অন্যের হক সংশ্লিষ্ট যেসব ক্ষেত্রে, যেমন, আর্থিক লেনদেন ও বিবরণীর ক্ষেত্রে- সবসময় যাচাইপূর্বক সিদ্ধান্ত নিতে হয়। কেবল বিশ্বাস এখানে মোটেও কোনো আবেদন রাখে না। কাউকে বিশ্বাস করাতে আমাদের অনেক কাজ সহজ হয়ে যায়, অনেক সময় বেঁচে যায়। কিন্তু যখনই আর্থিক ব্যাপার আসবে, তখন অবশ্যই যাচাইপূর্বক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এর প্রেক্ষিতেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আর্থিক বিবরণীর অডিট বা নিরীক্ষা করা হয়, শরীয়াহ অডিট করা হয় ইত্যাদি।
সরকারী প্রতিষ্ঠান ও যেকোনো নন-প্রফিট/ দাতব্য প্রতিষ্ঠানে এই অডিট আরো বেশি জরুরী, এবং বেশি সতর্কতার সঙ্গে করতে হয়। এ দুই ধরণের প্রতিষ্ঠানে যুগ যুগ ধরে দুর্নীতির ইতিহাস রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের অডিটে অতিরিক্ত যোগ্যতা ও সার্টিফিকেটের প্রয়োজন হয় বহির্বিশ্বে। দেখা যায় হয়ত উচ্চমূল্যে কিছু ক্রয় করা হয়েছে, বা নিকটাত্মীয়/বন্ধু-পরিচিতদের ওয়ার্ক অর্ডার দেয়া হয়েছে, বা কাজ ছাড়াই ভাউচার হয়েছে ইত্যাদি। এগুলো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বের করাই অডিটরের কাজ। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এসব অডিট থেকে অনেক বড় দুর্নীতি প্রকাশ পেয়েছে। অবশ্য পুরো সিস্টেম করাপ্ট হয়ে গেলে ভিন্ন কথা।
সুনীতি ও দুর্নীতি ব্যাপারটা যে কারো ক্ষেত্রে ঘটতে পারে। দাড়ি থাকুক বা না থাকুক, পোশাক হিসেবে মাথায় টুপি/জুব্বা থাকুক বা না থাকুক। তাই আল্লাহ তায়ালা নৈতিক শিক্ষা দানের পাশাপাশি বিভিন্ন কঠোর শাস্তির ঘোষণা দিয়েছেন। চোরের হাত কাটার কথা এসেছে, ডাকাতের ব্যাপারে আরো কঠিন শাস্তি এসেছে। শাস্তি ও নৈতিকতার শিক্ষা সমাজে চেক-এ্যান্ড-ব্যালেন্স বা ভারসাম্য রক্ষা করে।
আমি তরুণ প্রজন্মকে নিয়ে অনেক আত্মবিশ্বাসী। আমি বিশ্বাস করি, বর্তমান সোশাল মিডিয়ার কল্যাণে তরুণ প্রজন্ম সহজে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে পারছে। সমাজের বিভিন্ন জায়গায় গড়ে তোলা কৃত্রিম দেয়াল ভেঙে পড়ছে। সরকার, বিরোধী দল, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন ধর্মীয় দল, ডান-বাম দল – সবাই এক জায়গায় কথা বলতে পারছে। সবাইকে নিজ কথার প্রমাণ দিতে হচ্ছে, নৈতিক ভিত্তি শক্ত করতে হচ্ছে। এই কালচারটা একটি সলিড আগামীর ইঙ্গিত দিচ্ছে।
আসুন, দুর্নীতি যেখানেই হোক আমরা রুখে দেই। দুর্নীতিবাজের কোনো দল নেই, কোনো ধর্ম দুর্নীতিবাজের পক্ষে নেই। কোনো মাজহাব বা ইজম ও দুর্নীতিবাজের পক্ষে নই। আপনি আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামাত, কওমী, হেফাজত, সালাফী ইত্যাদি বা সরকারী কর্মচারী, আমলা, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, মাওলানা, হাফেজ – যে-ই হোন না কেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলুন। বিশ্বাস করুন, বৃদ্ধ বয়সে (যদি বেঁচে থাকেন) এ নিয়ে আপনি গর্ববোধ করবেন। আর যদি মৃত্যু এসে যায়, আখিরাতে এর উপযুক্ত প্রতিদান পাবেন ইনশা’আল্লাহ। রিযিক নিয়ে ভয় পাবেন না, যে রিযিক তাক্বদীরে আছে তা আসবেই।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে দাঁড়াতে কোনো লজ্জা নেই। নিজ দলের মান গেল বলে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমরা সবাই মিলেই এই জাতি। আজ আমরা সবাই এর বিরুদ্ধে দাঁড়ালেই কেবল একটি সুন্দর আগামীর প্রত্যাশা আমরা করতে পারি।
শেষ করছি, খলীফা হিসেবে আবু-বাকার সিদ্দীক রা. এর প্রথম ভাষণ দিয়ে। তিনি বলেন, ‘প্রিয় ভাইয়েরা, দায়িত্বটা আমার ওপর চলে এসেছে, অথচ আমি তোমাদের মাঝে সবচেয়ে ভালো মানুষটি নই। কাজেই, যদি ভালো কিছু করি, আমাকে তোমরা সহযোগিতা করবে; যদি খারাপ কিছু করে, তবে আমাকে ঠিক করে দিবে। সত্যবাদিতা হলো সততা, আর মিথ্যা হলো বিশ্বাসঘাতকতা। তোমাদের মাঝে দুর্বল মানুষটি আমার কাছে ঠিকই শক্তিশালী, যতক্ষণ না তার হক আমি তাকে ফিরিয়ে দিতে পারি ইনশাআল্লাহ। আর তোমাদের মাঝে শক্তিশালী ব্যক্তিটি আমার কাছে দুর্বল, যতক্ষণ না আমি তার কাছ থেকে অন্যের হক উসূল করতে পারি ইনশাআল্লাহ। যতক্ষণ আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অনুসরণ করি, ততক্ষণ তোমরা আমাকে অনুসরণ করবে। আর আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অনুসরণ না করলে তোমাদেরও আমাকের অনুসরণ করা লাগবে না।’ (আল-বিদায়া ওয়াল নিহায়া)
কওমীনিউজ/মুনশি
বাংলাদেশ সময়: ৯:৪৬ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২১ জুলাই ২০২০
qaominews.com | a k m ashraf