আন্তর্জাতিক ডেস্ক | ২৮ আগস্ট ২০২০ | ৯:১৭ অপরাহ্ণ
ছবি: সংগৃহীত
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির দাঙ্গায় মুসলমানদের বাড়ি-ঘরে হামলা, অগ্নিসংযোগ এবং হত্যাকাণ্ডে দেশটির পুলিশের সক্রিয়ভাবে জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। দিল্লির ধর্মীয় এই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ‘পুলিশ গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন’ করেছে বলে অভিযোগ করেছে সংস্থাটি।
দিল্লির দাঙ্গার ছয় মাস পর গতকাল বৃহস্পতিবার (২৭ আগস্ট) এক বিবৃতিতে এমনটা জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, দিল্লি পুলিশ নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রতিবাদকারীদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে। অ্যামনেস্টি আরও বলছে, দিল্লিতে দাঙ্গা চলাকালে ৫৩ জনের বেশি নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগ মুসলিম। এর পাশাপাশি পাঁচ শতাধিক আহত এবং বহু বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া অনেক মানুষকে আটকের পর কারা হেফাজতে নির্যাতন করা হয়েছে, যা দিল্লির কয়েক দশকের শান্তিময় ইতিহাসকে নির্মমভাবে পদদলিত করেছে।
অ্যামনেস্টির তদন্ত প্রতিবেদন বলছে, গত ফেব্রুয়ারির সেই সপ্তাহজুড়ে চলা সহিংসতায় রাজনীতিকরা যেমন ঘৃণা ছড়িয়েছেন, ঠিক তেমনি পুলিশও ভারতীয় আইন ভঙ্গ করেছে। অ্যামনেস্টির এই প্রতিবেদনের ব্যাপারে দিল্লি পুলিশের মন্তব্য পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে বিবিসি।
গত ফেব্রুয়ারিতে দিল্লির দাঙ্গায় পুলিশের সংশ্লিষ্টতা ও নিষ্ঠুর অভিযান নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। অ্যামনেস্টির তদন্তে বিবিসির প্রতিবেদনের উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও ওই সময় দাঙ্গায় পুলিশ সদস্যদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করেছিল দিল্লি পুলিশ।
তদন্ত প্রতিবেদনে অ্যামনেস্টি বলছে, দিল্লির দাঙ্গায় হিন্দুরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন; তবে দাঙ্গার মূল টার্গেট ছিলেন মুসলিমরা। দাঙ্গা স্বতঃস্ফূর্তভাবে হয়েছিল বলে মনে হয় না। কারণ এতে হতাহতের সংখ্যা হিন্দুদের তুলনায় তিনগুণ বেশি হয়েছে মুসলিমদের। এছাড়াও মুসলিমদের ব্যবসা এবং সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
ভারতের বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন গত বছর পার্লামেন্টে পাস হওয়ার পর দেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ-সহিংসতা শুরু হয়। সমালোচকরা নাগরিকত্ব সংশোধনী এই আইনকে মুসলিমবিরোধী বলে আখ্যা দিয়ে দেশটির সরকারের সমালোচনা করেছেন। দেশজুড়ে নাগরিকত্ব আইনবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হলেও দিল্লিতে তা দাঙ্গায় রূপ নেয়। আইনটির পক্ষে এবং বিপক্ষের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাতের মাধ্যমে দ্রুত তা ধর্মীয় দাঙ্গায় পরিণত হয়। প্রায় তিন দিন ধরে চলা নারকীয় তাণ্ডবে দিল্লিতে মুসলিমদের বাড়ি-ঘর দোকানপাট ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও মারধরের ঘটনা ঘটে।
ওই সময় ধারণকৃত সহিংসতার ভিডিও ফরেনসিক বিশ্লেষণে অ্যামনেস্টি দেখতে পায়, দাঙ্গার সমর্থনে মুসলিমদের বাড়ি-ঘর ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও মুসলিমদের মারধরে উত্তেজিত হিন্দুদের সহায়তা করেছে পুলিশ। মুসলিমদের বিরুদ্ধে এ ধরনের সহিংসতা চললেও নীরব ভূমিকা পালন করেছে তারা।
শুধু তাই নয়, ভারতের কট্টর হিন্দুত্ববাদী নেতারাও দাঙ্গায় উসকানি দিয়েছেন বলে অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে। অনেকে এই হিন্দু নেতাদের সমালোচনা করলেও পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে কোনও ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি। সেই সময় মার্কিন প্রভাবশালী দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে বলা হয়, দিল্লির দাঙ্গায় অন্তত তিনটি মসজিদে অগ্নিসংযোগ করেছে পুলিশ। সহিংসতা বন্ধের চেষ্টা না করে উন্মত্ত জনতার সঙ্গে যোগ দিয়ে জয় শ্রী রাম বলে স্লোগান দিচ্ছিল পুলিশ সদস্যরা। একই সঙ্গে এলোপাতাড়ি গুলি চালায় তারা।
সন্দেহভাজন উসকানিদাতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পরিবর্তে পুলিশ মানবাধিকার কর্মী, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গণহারে গ্রেফতার করেছে; যাদের বেশিরভাগই মুসলিম। দিল্লির এই দাঙ্গা স্বতন্ত্রভাবে তদন্তের পরামর্শ দিয়েছে অ্যামনেস্টি।
কওমীনিউজ/এম
বাংলাদেশ সময়: ৯:১৭ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ২৮ আগস্ট ২০২০
qaominews.com | a k m ashraf