আন্তর্জাতিক ডেস্ক | ১৬ ডিসেম্বর ২০২০ | ৮:১৫ অপরাহ্ণ
ছবি: সংগৃহীত
ভারতের দিল্লিতে ঐতিহাসিক স্থাপত্য কুতুব মিনারের প্রাঙ্গণে অতীতে হিন্দু ও জৈন মন্দিরের অস্তিত্ব ছিল, এই দাবি জানিয়ে মামলা করেছেন দু’জন আইনজীবী। ওই মন্দিরে হিন্দু ও জৈনরা যাতে পূজা এবং উপাসনা করার অধিকার ফিরে পান, সেই দাবি জানিয়ে তাদের করা আবেদন দিল্লির একটি দেওয়ানি আদালত গ্রহণ করেছে।
বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মতো বিভিন্ন হিন্দুত্ববাদী সংগঠন এই দাবিতে সক্রিয় সমর্থনও জানাচ্ছে। তবে ভারতে ইতিহাসবিদরা অনেকেই মনে করছেন, সে দেশে মুসলিম শাসনামলের বিভিন্ন পুরাকীর্তিকে যেভাবে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণে ‘পুনরুদ্ধারে’র চেষ্টা চলছে, কুতুব মিনার সেই তালিকায় সবশেষ সংযোজন।
কুতুবউদ্দিন আইবক শাহী দিল্লির আইকনিক স্থাপত্য কুতুব মিনারের নির্মাণ শুরু করেছিলেন। তিনি ছিলেন মুহম্মদ ঘোরীর একজন সেনাপতি। ১১৯২ সালে মুহম্মদ ঘোরীর কাছে পৃথ্বীরাজ চৌহানের পরাজয়ের পরই দিল্লিতে হিন্দু শাসনের অবসান হয়, আর তার কয়েক বছর পরেই শুরু হয় এই মিনারের নির্মাণকাজ।
দিল্লির সাকেত ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে পেশ করা এক আবেদনে আইনজীবী হরিশঙ্কর জৈনএবং রঞ্জনা অগ্নিহোত্রী বলেছেন, ওই কমপ্লেক্সে আগে থেকেই শ্রীবিষ্ণুহরি-সহ হিন্দু ও জৈন দেবতাদের ২৭টি মন্দির ছিল। তাদের দাবি, সুলতান কুতুবউদ্দিন আইবক সেগুলো ভেঙেই তৈরি করেছিলেন কুওয়াত-উল ইসলাম মসজিদ, আরবি ভাষায় যার অর্থ হল ‘ইসলামের শক্তি’।
হিন্দুদের ভগবান বিষ্ণুহরিদেবের ‘মিত্র’ হিসেবে মামলাটি যিনি দায়ের করেন, সেই অ্যাডভোকেট হরিশঙ্কর জৈন বলছিলেন, “৮শ’ বছর ধরে ওই মসজিদ খালিই পড়ে আছে, কেউ সেখানে নামাজ পড়েনি।” আর সহ-আবেদনকারী রঞ্জনা অগ্নিহোত্রী বলেন, কুতুবউদ্দিন আইবকের নিজের স্থাপিত ফলকেও পরিষ্কার বলা ছিল, ২৭টি হিন্দু ও জৈন মন্দিরের ধ্বংসস্তূপের ওপরই এই মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
পরিষদের জাতীয় মুখপাত্র বিনোদ বনসল জানান, ইতিহাস এই সাক্ষ্যই দেয় যে অতীতে বহু মন্দির ভেঙেই সেই ধ্বংসস্তূপের ওপর মসজিদ কিংবা মুঘল যুগের নানা স্থাপত্য নির্মিত হয়েছিল। কুতুব মিনারেও একই ঘটনা ঘটেছিল। এখন তাজমহল চত্বরে যদি মুসলিমদের নামাজ পড়ার অধিকার থাকে, তাহলে তো ধর্মনিরপেক্ষ দেশে হিন্দুদেরও কুতুব মিনারে একই অধিকার পাওয়া উচিত।
তবে ইদানীংকালে ভারতে বিভিন্ন মুসলিম যুগের স্থাপত্যকে যেভাবে হিন্দু ঐতিহ্যর আলোকে নতুন করে তুলে ধরার চেষ্টা হচ্ছে, এটাকেও সেই চেষ্টারই অংশ বলে মনে করছেন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও ইতিহাসবিদ পারুল পান্ড্য-ধর।
দিল্লির কুতুব মিনার কমপ্লেক্স জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠান ইউনেস্কোর স্বীকৃত একটি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট, যা ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক সংস্থা বা এএসআইয়ের নিয়ন্ত্রণে। এখন আদালত যদি সেখানে হিন্দু বা জৈনদের সত্যিই পূজার অধিকার দেয়, তাতে যে নতুন বিতর্কের দরজা খুলবে তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। সূত্র: বিবিসি বাংলা
বাংলাদেশ সময়: ৮:১৫ অপরাহ্ণ | বুধবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২০
qaominews.com | a k m ashraf