ফিচার ডেস্ক | ১৯ জুলাই ২০২০ | ২:০৬ অপরাহ্ণ
ছবি: সংগৃহীত
১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় কওমি মাদ্রাসার সর্ববৃহৎ শিক্ষাবোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ। চলমান এই অস্থিরতার সময় চলুন দৃষ্টি ফেরানো যাক পেছনে। বেফাকের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলো কী ছিল, জেনে নেয়া যাক-
১. অত্র প্রতিষ্ঠানের আদর্শিক দৃষ্টিভঙ্গীর আওতাভুক্ত দ্বীনি তালীম ও তারবিয়াতের সুমহান দায়িত্বে নিয়োজিত কওমী মাদরাসা সমূহকে বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ-এর পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ করা। দ্বীনের হিফাযত, ইশাআত, তাবলীগ ও এলায়ে কালিমাতুল্লাহর সুমহান দায়িত্ব আঞ্জাম দানের লক্ষ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি, হৃদ্যতা ও সহানুভূতির চেতনা জাগ্রত করা।
২. অন্তর্ভুক্ত সকল মাদরাসার তালীম-তারবিয়াতের মানোন্নয়নের লক্ষ্যে সুষ্ঠু পাঠ্যসূচী ও পাঠ্য তালিকা প্রণয়ন, শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে সিলেবাস সংস্কার ও প্রয়োজনীয় কিতাবাদী প্রণয়ন কিংবা নির্বাচন, তালীম তারবিয়াতের মান যাচাইয়ের জন্য অন্তর্ভূক্ত প্রতিষ্ঠান সমূহ পরিদর্শন ও কেন্দ্রীয় পরীক্ষা গ্রহণ।
৩. মাদরাসা সমূহের তালীম ও তারবিয়াতের মান এবং মাদরাসা প্রশাসনের মান উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের সহযোগী প্রতিষ্ঠান যেমন- শিক্ষক-কর্মচারী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, সাময়িক কর্মশালা, সেমিনার ও আলোচনা সভা/মতবিনিময় সভা ইত্যাদির ব্যবস্থা করা।
৪. বিষয়ভিত্তিক যোগ্য ব্যক্তি গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিষয়ভিত্তিক গবেষণামূলক উচ্চ শিক্ষার ব্যবস্থা করা। এ জন্যে বিভিন্ন স্থানে উচ্চ পর্যায়ের জামেয়া ও বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
৫. বিভিন্ন মুসলিম দেশের উচ্চ পর্যায়ের ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহের সাথে বেফাকের যোগসূত্র ও সম্পর্ক সৃষ্টির মাধ্যমে বেফাকের সনদকে তাদের নিকট গ্রহণযোগ্য করে তোলা, যাতে বেফাকের ফারেগীনদের সে সব প্রতিষ্ঠানে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি হয়।
৬. দেশের যে সব অঞ্চলে কওমী মাদরাসা নেই, সে সব অঞ্চলে কওমী মাদরাসা গড়ে তোলার যথার্থ উদ্যোগ গ্রহণ করা। প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব পাঠ্যক্রমের মাধ্যমে দেশের সর্বত্র আদর্শ মক্তব ও প্রাইমারী শিক্ষা চালু করা। মসজিদ ভিত্তিক আদর্শ মক্তব স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা এবং মসজিদ আবাদ-এর কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা।
৭. কওমী মাদরাসায় শিক্ষাপ্রাপ্ত উলামায়ে কিরামের সম্মানজনক কর্ম সংস্থানের নবতর পন্থা উদ্ভাবন এবং সমাজ জীবনে তাদেরকে প্রতিষ্টিত করার বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং তাদের ধর্মীয় মর্যাদা ও অধিকারকে নিশ্চিত করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা।
৮. সমকালীন সকল বাতিল মতবাদ সম্পর্কে ছাত্রদের সচেতন করার যথার্থ উদ্যোগ গ্রহণ করা এবং ছাত্রদেরকে এ সকল ফিতনা থেকে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা ও দিক নির্দেশনা দান করা।
৯. ইসলাম বিদ্বেষী ষড়যন্ত্রকারী মহলের ষড়যন্ত্র থেকে কওমী মাদরাসা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সমূহকে রক্ষা করা এবং এগুলোকে দ্বীন প্রচারের সুদৃঢ় মারকায বা কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলা।
১০. সর্বস্তরের মুসলিম জনতাকে প্রয়োজনীয় দ্বীনী জ্ঞান দান করার জন্য এবং তাদেরকে মূর্খতা ও নিরক্ষরতার লাঞ্ছনা হতে মুক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা। এতদ সঙ্গে তাদের ঈমান- আকীদা ও তাহযীব-তামাদ্দুন-এর ইছলাহ, সংরক্ষণের নিমিত্তেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং ঈমান-আকীদা আমল-আখলাক বিধ্বংসী ফিতনা সম্পর্কে তাদেরকে সর্বদা সজাগ ও সচেতন রাখার ব্যবস্থা করা। প্রয়োজনে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সর্বাত্মক আন্দোলন গড়ে তোলা।
১১. কওমী মাদরাসা সমূহের মাধ্যমে দ্বীনি দাওয়াত, আমর বিল মারূফ ও নাহী আনিল মুনকারের দায়িত্ব যথার্থ ভাবে আঞ্জাম দেয়ার ব্যবস্থা করা। মুসলিম সমাজের ঈমান-আকীদার সংরক্ষণ, আমল-আখলাকের মানোন্নয়নের নির্দেশনা দান এবং গোটা সমাজকে ইসলামী তাহযীব-তামাদ্দুনের অনুসরণের প্রতি এমনভাবে অনুপ্রাণিত করা যাতে ইসলামী তাহযীব ও তামাদ্দুনই এ দেশের মানুষের নিকট একমাত্র অনুসরণীয় আদর্শ হিসাবে প্রতিভাত হয়ে উঠে।
১২. আধুনিক কালের নব উদ্ভুত বিষয়াবলী সম্পর্কে এবং সমাজে প্রচলিত আইন-কানুন ও বিধি-বিধান সম্পর্কে ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিভঙ্গি নিরূপণের লক্ষ্যে বিশেষজ্ঞদেরনিয়ে গবেষণার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে শরীয়তের দৃষ্টিভঙ্গি নিরূপণ ও জন সাধারণের মাঝে ব্যাপক ভিত্তিতে তা প্রচারের ব্যবস্থা করা। যাতে জনগণের জন্য সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিভঙ্গি কি তা জানা ও অনুসরণ করা সহজ হয়।
১৩. জনগণের সামনে কওমী মাদরাসার খিদমাত, অবদান ও নিঃস্বার্থবাদীতার বিষয়টি পরিস্কার ভাবে তুলে ধরা। যাতে জনগণ বুঝতে পারে যে, এদেশে কওমী মাদরাসাসমূহ একনিষ্ঠ ভাবে ধর্মীয় খিদমাত আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছে এবং সকল প্রকার লোভ লালসার উর্ধ্বে থেকে নিঃস্বার্থ ভাবে দ্বীনের সঠিক দিক নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছে।
১৪. রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বেফাকের ন্যায়সঙ্গত অধিকার ও মর্যাদা এবং কওমী মাদরাসা শিক্ষার মর্যাদাকে স্বীকৃত ও প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে সর্বাত্মক উদ্যোগ ও প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া।
১৫. দ্বীনের মূল কেন্দ্র মসজিদ সমূহকে জীবন্ত ও প্রাণবন্ত করে গড়ে তোলা।
এ সকল প্রস্তাবনার মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হল ইলমে ওয়াহী ও উলূমে নবুয়্যতের বস্তুনিষ্ঠ জ্ঞান চর্চার পথ উন্মুক্ত করা এবং ইসলামী শিক্ষা ও তাহযীব তামাদ্দুনের ব্যাপক প্রচার ও প্রসারের মাধ্যমে মানুষকে আল্লাহ অভিমুখী করা এবং আল্লাহর যমীনে আল্লাহর দ্বীন বুলন্দ করার ও সমাজের সর্বস্তরের মুসলিম জনতার নিকট দ্বীনের প্রয়োজনীয় জ্ঞানসমূহ পৌঁছে দেয়ার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালীন কামিয়াবী হাসিল করা।
সূত্র: গঠনতন্ত্র, বেফাক পরিচালনা বিধি।
বাংলাদেশ সময়: ২:০৬ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১৯ জুলাই ২০২০
qaominews.com | a k m ashraf